March 12, 2025, 9:52 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
সবজির জেলা হিসেবে খ্যাত যশোরে এ বছর আলুর ফলন বেড়েছে। মৌসুমের শুরুতে কয়েক দফা বৃষ্টিতে অন্য ফসল উৎপাদনে কৃষকরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে আবহওয়া অনুকুল থাকায় আলুর চাষে ভাল সাফল্য পেয়েছেন কৃষকরা। অন্যদিকে, আলুর পাশাপাশি বীজ আলু উৎপাদনেও ভাল করেছেন জেলার কৃষকরা।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার আটটি উপজেলায় ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ৩৭৭ টন। গত বছর আবাদ ছিল ১৫০০ হেক্টরে।
কৃষকরা জানাচ্ছেন, আলুর ফলন ভাল হয়েছে। এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে এ বছর ১০০ মণ পর্যন্ত আলু উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। গত বছর এ উৎপাদন ছিল ৮৫-৯০ মণ। সে হিসাবে এ বছর বিঘা প্রতি ১০-১৫ মণ বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে।
যশোর কোদালিয়া গ্রামের কৃষক রুহুল কুদ্দুস সালেহ জানান, তিনি ‘৫০ শতক জমিতে আলু আবাদ করেছেন। এক বিঘা জমিতে এ বছর ১০০ মণ করে আলু উৎপাদন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ১০-১৫ মণ বেশি উৎপাদন হয়েছে।
তবে ভিন্ন একটি পর্যবেক্ষণ দিলেন এই কৃষক। তিনি জানান, এ বছর আলুর ফলন সব এলাকাতেই বেশী হয়েছে। এ কারণে বাজারে আলুর দাম এবার একটু কম।
“ গত বছর এ সময়েই প্রতি কেজি ২৮-৩০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করেছেন। সেখানে এবার ১৯-২০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ”উৎপাদন খরচও বেড়েছে তবে উৎপাদন বেশি হওয়ায় খরচ পুষিয়ে যাচ্ছে।’
জানতে চাইলে যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সমরেন বিশ্বাস বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় যশোরে আলু আবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে।’
তিনি বলেন, দাম একটু কম হরেও উৎপাদন বেশী হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না কৃষকরা।
অন্যদিকে, আলু বীজ উৎপাদনেও বড় সাফল্য তৈরি করছেন যশোরের কৃষকরা।
কৃষি অফিস জানাচ্ছে, জেলায় তিন শতাধিক কৃষক উৎপাদন করছেন বীজ আলু। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ এসব কৃষক এ বছর এক হাজার টন বীজ আলু উৎপাদন করেছেন। বিএডিসির পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কৃষকরাও বীজ আলু সংরক্ষণ করছেন, যা আগামী বছর বীজের ঘাটতি পূরণ করবে।
সদর উপজেলার নোঙরপুর গ্রামের কৃষক বদরুল আলম এ বছর সাত বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছেন। এর মধ্যে ৫০ কেজি ওজনের ২২০ বস্তা আলুবীজ বিএডিসি গুদামে সরবরাহ করছেন তিনি।
বদরুল আলমের মতো নোঙরপুর, কোদালিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের ৯০ জন চাষী বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ কৃষক হিসেবে আলুবীজ উৎপাদন করছেন। এসব কৃষক আলুবীজ বস্তায় ভরে বদরুল আলমের বাড়ির উঠানে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সেখান থেকে গ্রেডিং করে আবার বস্তায় ভরে বিএডিসির ট্রাকে করে এগুলো সংরক্ষণ গুদামে পাঠানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিএডিসি (বীজ) যশোরের উপপরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সংগ্রহ শেষে বাজারদর পর্যবেক্ষণ করে এ সংক্রান্ত কমিটি কৃষকের আলুর দাম নির্ধারণ করবে। এরপর কৃষকের পাওনা টাকা মেটানো হবে।’
কৃষকরা বলছেন, এ বছর বীজ, সার ও বালাইনাশক, চাষ, সেচ, শ্রম ও জমির ইজারামূল্য মিলিয়ে প্রতি বিঘায় ৪০-৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আলুবীজের দাম কেজিপ্রতি বাজার ছাড়া ৮-১০ টাকা বেশি পান কৃষক। সে হিসেবে আলুবীজ উৎপাদন করে খরচ বাদে বিঘাপ্রতি ৩০-৩৫ হাজার টাকা লাভ থাকছে।
Leave a Reply